Main Menu

নারী নির্যাতনের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট : অজিত কুমার রায়

নারী নির্যাতনের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

নারী নির্যাতনের ইতিহাসঃ সভ্যতার শুরুতে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বা গোষ্ঠী ছিল। তখন নারীরাই পরিবার বা গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতো। তখন নারী নির্যাতন ছিল না বললেই চলে। সমাজে কোনো নৈতিকতা বোধ প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় এবং নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা থাকার কারণে নারী নির্যাতন প্রসংগটাও তখন ভ্রুণ অবস্থায় ছিল। পরবর্তী কালে ধীরে ধীরে অপেক্ষাকৃত বলশালী হওয়ার কারণে পুরুষ নারীকে ক্রমে লালসা অন্যান্য উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাদের আজ্ঞাবহ করতে থাকে। প্রতিষ্ঠিত হয় পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। বিবর্তনের ইতিহাস ধারণা দেয়।

এরপর থেকে নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গটা সৃষ্টি হয়। পুরুষ তার লালসা চরিতার্থ করা অন্যান্য সামাজিক সুবিধা স্বল্পায়াসে করায়ত্ব করে নারীদের অধিক নিরবচ্ছিন্ন কাজে নিয়োগের জন্য প্রথমে অলিখিত সামাজিক বা গোষ্ঠীরীতি   তৈরি করতে থাকে। বিবর্তনের ফলে সভ্যতা অগ্র্রসর হলে ভাষা আবিষ্কার হলে সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতা স্বৈরতান্ত্রিকতায় পরিণত হয়। পুরুষের ভেতর শ্রেণিবিভাজন হয়। শিক্ষিত লোকেরা প্রিস্ট, পুরোহিত, গুরু, মুনি বা অন্য সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত হয়। অন্যদের গীতা প্রদত্ত শ্রেণি বা বল্লালসেন প্রবর্তিত শ্রেণিতে ফেলা হয়।

শুধু ব্রাহ্মণদেরকে জ্ঞান লাভের অধিকার দেওয়া হয়। তারা তাদের মতো করে শাস্ত্রের বিধিনিষেধ লিপিবদ্ধ করেন। পুরুষকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী করা হয়। ব্রাহ্মণরা রাজারও উপদেশদাতা হয়ে ওঠেন। রাজাকে তারা নির্দেশ উপদেশ দিতেন। তাদের নির্দেশ রাজা লঙ্ঘন করতে পারতেন না। ফলে পুরোহিত শ্রেণি দেবারাধনার চেয়ে ক্ষমতা আরাধনার অহঙ্কারে মত্ত হয়ে ওঠেন। মন্দিরে সেবাদাসীদের দ্বারা তাঁরা যৌন লালসা চরিতার্থ করতেন। তাঁদের জারজ সন্তানরাও সেবক হিসাবে জীবনাতিবাহিত করত। মন্দিরে ধর্মকর্মের সংগে এই যৌন বিলাস বা নির্যাতন প্রচলিত ছিল। কিন্তু, তাঁদের বিরুদ্ধে নিচু জাতির লোকেরা বা রাজা উচ্চবাচ্য করতে পারতেন না। রাজাও একই ধরণের কদাচারে লিপ্ত থাকতেন। নিত্য নতুন নারী সম্ভোগ তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। ওদিকে অন্ত:পুরে এক বা একাধিক রানি মানসিক শারীরিক নিগ্রহের শিকার হতেন। কোনো নারী অবাধ্য হলে তাকে বেত্রাঘাত বা অন্য শাস্তি প্রদানের বিধি ছিল। রাজা হর্ষবর্ধন সভায় সুন্দরী গণিকা দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তারা সকাল থেকে রাতভর রাজার সংগী হতো। খাবার পরিবেশন, মদ পান, গান, নৃত্য পরিবেশন করে, অতিথি আপ্যায়ন করে সবার মনোরঞ্জন করত। শুধু ভারতবর্ষেই নয়, সমগ্র এশিয়া ইউরোপে সূদীর্ঘ প্রাচীনকাল থেকে আজ অব্দি সেবাদাসী প্রথা কমবেশি আছে। সুতরাং নারীদের উপর যৌন নির্যাতন সারা পৃথিবীতে প্রাচীন সময় থেকে আজ অব্দি বিবর্তিত রূপে বিরাজমান। আফ্রিকা, এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, কোনো দেশই কথা অস্বীকার পারবে না। কারণ, সেখানে নারী নির্যাতনের তথ্য নির্ভরযোগ্য জার্নালে বা পেপারে দেওয়া হচ্ছে।

মোট কথা হলো, এটি একটি বিশ্বজনীন সমস্যা। নারী অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোমল স্বভাবের বলে তাদের উপর পুরুষ তাদের তৈরি করা নিয়মাবলী প্রয়োগ করে। তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। শাসন করে নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাদের উচ্চভাষী হওয়া চলবে না বা তারা উঁচু শব্দে পথ চলতে পারবে না। অধিকাংশ পুরুষ নারীকে শুধুমাত্র নিজের ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। নারী যদি একঘেয়েমি কাটানোর আশায় পুরুষ বন্ধু গ্রহণ করে বা পরকীয়ায় আসক্ত হয়, তাহলে ধর্মের দৃষ্টিতে তার ভয়ঙ্কর শাস্তি হয়। এক সময় হিন্দু সমাজে মাথা মুড়ে ঘোল ঢেলে গাধার পিঠে চড়িয়ে গ্রাম ঘুরিয়ে গ্রামছাড়া করা হতো। অন্যান্য ধর্মের শাস্তি বা মারপিট আরও তীব্র হতে পারে। রীতিতে ভিন্নতা আছে পৃথিবীর চার হাজার তিনশর বেশি ধর্মে। তবে নারী যে দাসী, তার কাছে স্বামীই যে শেষ অবলম্বন, সেই ঐহিত্য সংস্কার তাকে জন্ম থেকে শেখানো হয়। পৃথিবীর কোনো সমাজে পুরুষের কারুর কাছে জবাবদিহি করার প্রয়োজন হয় না। সে পরকীয়ায় আসক্ত হতে পারে। বাইরে যেতে হলে পুরুষকে পারমিশান নিতে হয় না বা সংগী সাথে নিতে হয় না। কিন্তু, নারীর বেলায় রেওয়াজটা বিপরীত। এর ব্যত্যয় হলেই নারীর কপালে অশেষ দুর্ভোগমারপিট, শ্বশুরশাশুড়ির  গঞ্জনা। অনেক সময় এই সামান্য কারণে তাকে ত্যাগ করে নোতুন বৌ ঘরে তোলা হয়। কিশোরী বউয়ের সতীত্ব পরীক্ষা করা হয় বিশেষ কৌশলে। পুরুষের চরিত্র নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে না। নারী অত্যাচারিত হলে সে সেটা তার ভাগ্য মনে করে এবং কোনো প্রতিবাদ করে না। দুঃশ্চরিত্র স্বামীর কোনো কলঙ্ক হয় না। তার পরকীয়া আমৃত্যু চলমান থাকতে পারে। তার সমাজ স্বীকৃত রক্ষিতাও থাকে। স্ত্রী সবল হলেও দুর্বল বা সবল স্বামীকে প্রতিরোধের চেষ্টা না করে নির্যাতিত হতে হতে অনেক সময় বিতাড়িত হয় বা অনৈতিক পথে পা বাড়ায় বা আত্মহত্যা করে। অনেক সময় স্বামীর পরিবার সম্মিলিতভাবে পারিবারিক সম্মান বাঁচানোর জন্য স্ত্রীকে হত্যা করে। টাকা বা প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে। স্ত্রীকে স্বামীর বাক্য ব্যয়ে বা গায়ের জোরে বশ করে রাখাইতো হল নারী নির্যাতন।

নারী নির্যাতনের নানা রূপ : ইভটিজিং, জবরদস্তি তাকে তুলে নিয়ে আটকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, অশ্লীল আচরণ ভাষা প্রয়োগ করা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, লাগাতার ধর্ষণ, যৌতুক, যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানি, মানসিক নির্যাতন, পারিবারিক বৈষম্য ছেলে মেয়ের মধ্যে, কিশোর বয়সের প্রেমে বিরোধ, পারিবারিক অশান্তি, ব্যক্তিত্বহীন মুর্খ স্বামীর আচরণ তেজস্বী শ্বশুরশাশুড়ির নিষ্ঠুর আচরণ, পরকীয়ায় আসক্ত নারীর প্রতি আচরণ, পরকীয়ায় আসক্ত পুরষের স্ত্রীর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ, উত্তরাধিকার বঞ্চিত হওয়া, উপার্জনে বৈষম্য, নারীর আয় স্বামীর কাছে পুরোপুরি তুলে দেয়া, তাকে গৃহবন্দি রাখা, অনেক সমাজে বা দেশে নারীর খৎনা (ইনফুবিলেশান) প্রথা (যেটি অমানবিক বেদনাদায়ক), গর্ভে সন্তান এলে তাকে শেষ করে ফেলা, জবরদস্তি কন্যা সন্তানকে তার পছন্দের বাইরে বিয়ে দেয়া, শ্বশুর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হলে মেয়েকে আশ্রয় না দেওয়া, পছন্দের পাত্রের সংগে বাবার অমতে বিয়ে করলে অবহেলিত বা পরিত্যক্ত হওয়া, কন্যা ভাড়া দিয়ে সংসার চালানো, বিশেষ করে আমীরদের সাথে মুতা বিবাহ দেওয়া। দুবাই বা মধ্যপ্রাচ্যে, গোয়া, মেরিনা ইত্যাদি বীচে অমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। ইউরোপ আমেরিকাতে নারী নির্যাতন থাকলেও সেখানে নারী স্বাধীনতার কারণে নারী নির্যাতনের সংখ্যা কিছুটা কম। সেখানে পরস্পরের সম্মতিতে যৌনসংসর্গ হলে সেটা পরিভাষা অনুসারে নির্যাতন বলে গণ্য হয় না। অবশ্য কোনো কোনো ধর্মে এটা অনুশাসন বিরোধী।

নারী কিডন্যাপ চক্র নারীপাচার করে চলেছে। আবার বাপ মায়ের থেকে কিনে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে। তারপরে পাচার করে বিভিন্ন দেশে। কিছু ইসলামিক দেশেও সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে কর্মী নারীরা গৃহকর্তা, সন্তান গৃহকর্ত্রী কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে মারা যাচ্ছে বা দেশে ফিরে আসছে কপর্দকশূন্য হয়ে। তার স্বামী, বাবামা, বন্ধুবান্ধবী, কেউ তাকে সমাজের চাপের কারণে আশ্রয় দেয় না। সেক্ষেত্রে সে গার্মেন্টস বা অন্য কোন ছোট শিল্পে শ্রম দিচ্ছে। ইজ্জতও হারাচ্ছে বস উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে। কেউ কেউ কুচক্রে পড়ে পতিতালয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে নারী শ্রমিক তিন মাস পরে মালিকের আশ্রিতা হয়ে যায়। তার উপরে স্বপরিবারে যৌন নির্যাতন  চালায়, মারপিট করে, তার শরীরে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়, তাকে দিয়ে অনেক বাড়িতে কাজ করানো হয়, না খাইয়ে রাখা হয়। চুক্তি অনুযায়ী মজুরি দেয়া হয় না। সর্বশান্ত হয়ে দেশে ফিরলে তাদের অধিকাংশ স্বামীর পরিবার বা বাপের বাড়ি থেকেও পরিত্যক্ত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে বা বিপথগামী হয়।

আজকের শিক্ষিত ছাত্রেরা এমনকি বয়স্ক লোকও তাদের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে অশ্লীল ভাষা। যেমন, মাল, চীজ, রসে টুইটম্বুর, ডালিম, ফজলি আম, মাইরি, ডালিম ফুলের মতো খাব খাব ঠোঁট.. কত অঞ্চলে কত অশ্লীল ভাষা নারীর  জন্যে জন্মেছে! এগুলোর সবই নারী নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। বন্ধু বা অফিস সহকারীর হাতেও নির্যাতিতা হচ্ছে নারী। বসের লালসা না মেটালে দুর্মূল্যের বাজারে চাকরি যেতে পারে। তাই বসকে অফিস টাইমে বা পরে বা দীর্ঘ ট্যুরে সংগ দিতে বাধ্য হয়ে নির্যাতিতা হয় কুমারী বা অল্পবয়স্কা নারী। ইসলামিক আইনে দেনমোহর দিয়ে একটা মেয়েকে বিয়ে করার নিয়ম। কিন্তু, উল্টোভাবে পাত্রপক্ষ যৌতুক দাবী করে। অপূরণে নির্যাতন করে নারীকে। বৌদ্ধ হিন্দু নারীর স্বামী বা বাবার সম্পত্তিতে অধিকার নেই। শ্বশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে বাপ বা ভাই তাকে বোঝা মনে করে। অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দেয় অনেক সময়। এখন নতুন অধিকার আইনের জন্যে অপেক্ষমান বঞ্চিত নারীরা।

নারী নির্যাতন বিকট রূপ ধারণ করছে সারাবিশ্বেদ্য থমাস রবটার্স ফাউণ্ডেশান নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়ে বলেছে (২৬ জুন ২০২০) সেখানে উঠে এসেছে সব দেশে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তান নারী নির্যাতনের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান সে তুলনায় অনেক ভালো। রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীতে নারীদের মধ্যে নারী নির্যাতনে সব থেকে বিপজ্জনক দেশ হচ্ছে ভারত। যৌন নির্যাতন, হেনস্তা, ধর্মীয় প্রথা এবং শ্রম বা যৌন ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ভারতের নারীরা। পাকিস্তানে ধর্মীয় গোঁড়ামি অনার কিলিং এর শিকার হন বহু নারী। পারিবারিক হিংসা যৌন নির্যাতনও এদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা। আফগানিস্তানে আর্থিক দিক থেকে খুবই নির্যাতিত বঞ্চিত নারীরা। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থেরও অভাব রয়েছে তাদের। সিরিয়ার নারীরা গার্হস্থ্য হিংসা, যৌন নির্যাতন আর্থিক দিক থেকে শোষিত। রাষ্ট্রসংঘের বিচারে কঙ্গো নারীদের জন্য নরকতল্য। এখানকার নারীরা বীভৎস যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। উন্নতির শিখরে থাকলেও পশ্চিমের দেশগুলোর মধ্যে যৌন হেনস্থা ধর্ষণের জন্য প্রথম বিশ্বের মধ্যে একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই তালিকাভক্ত।

নারী নির্যাতনের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকাঃ

() ভারত  () আফগানিস্তান  () সিরিয়া  () সোমালিয়া  () সৌদি আরব  () পাকিস্তান  () কঙ্গো  () ইয়েমেন  () নাইজেরিয়া  (১০) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্ষণের সংজ্ঞাঃ যদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতিত ষোল বছরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সাথে তার সম্মতিছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে অথবা ষোল বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করে তাহলে তিনি নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।

() যদি কোনো ব্যক্তি কোনো পুরুষ, কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সংশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ব্যাখ্যাযদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতিত () ষোলো বছরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সংগে তার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে অথবা () ষোলো বছরের কম বয়সের কোনো নারীর সংগে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সংগম করে তাহলে তিনি নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।

() যদি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা ওই ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

() যদি একা ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহলে দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দণ্ডনীয় হবেন।

() যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে () ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত  হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। () ধর্ষণের চেষ্টা করেন তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক ১০ বছর কিন্তু, অন্যুন বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

() যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কোনো নারী ধর্ষিতা হন, তাহলে যাদের হেফাজতে থাকাকালীন ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ, ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরি দায়ী ছিলেন। তিনি বা তারা প্রত্যেকে ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য অনধিক ১০ বছর কিন্তু, অন্যুন বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তার অতিরিক্ত অন্যুন ১০,০০০/- টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

এতসব কঠোর আইনের ধারা থাকা সত্ত্বেও ধর্ষকেরা বছরের পর বছর সাজার হাত থেকে বেঁচে বহাল তবিয়তে সমাজে ঘুরে বেড়ায় আইনের ফাঁক গলিয়ে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক!

ইভটিজিংকে অনেক নারীবাদীছোটখাটো ধর্ষণবলে আখ্যা দিয়েছেন যা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। হুমকির মুখে পড়ে পরিবার মেয়ে নিজেও। লেখাপড়া স্বাভাবিক জীবন যাপন তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। লেখাপড়া পুর্ণ হবার আগেই তার বিয়ে দেয় তার পরিবার বাধ্য হয়ে। ইভটিজাররা নানাভাবে তার পরিবারকে বিষিয়ে তোলে। অসম্মান, নির্যাতন বা বহিষ্কার জোটে তার ভাগ্যে।

ধর্ষিতার বিচারকালীন মানসিক নির্যাতন একজন নারী বা শিশু ধর্ষিতা হবার পর আদালতে বিচার প্রার্থনা করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে  সে নাজেহাল হয়ে থাকে। ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ সহজে ঘটে। কিন্তু, সেটা প্রমাণ করা খুবই কঠিন। বিচারকালে ধর্ষিতা তার যৌন সম্পর্কের অতীত ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে সংকোচ বোধ করে। কিন্তু, জেরা তাকে নিস্তার দেয় না।

ধর্ষণের প্রকারভেদঃ () ডেট ধর্ষণঃ পূর্বপরিচিতদের মধ্যে হয় স্বাভাবিক পরিস্থিতে বা ড্রাগ প্রয়োগে নারীকে অচেতন করে। যুক্তরাষ্ট্রেরন্যাশনাল ভিকটিম সেন্টারএকটি কলেজে জরিপ চালিয়ে দেখেছে, প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার হয়েছে অথবা তাদের উপর ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।  

() গণধর্ষণ : সারাবিশ্বে বিদ্যমান। 

() বৈবাহিক ধর্ষণঃ একে বৈবাহিক ধর্ষণ হিসেবে, স্ত্রীধর্ষণ হিসেবে, স্বামীর ধর্ষণ হিসেবে, পার্টনারের ধর্ষণ হিসেবে বা অন্তরঙ্গ সংগীর যৌন আক্রমণ হিসেবে জানা যায়। গবেষকরা বলেছেন, অপরিচিত মানুষের বলাৎকারের চেয়ে স্বামী পার্টনারের দ্বারা বলাৎকারে মানসিক ক্ষতির পরিমাণ বেশি থাকে।

() শিশু ধর্ষণ : পরিবারিক ব্যক্তি, আপনজন বা অন্যের দ্বারা ঘটে থাকে।

() সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণ : জাতীয় আঞ্চলিক সরকার তরুণ জনগোষ্ঠীকে যৌননিগ্রহ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রচারপ্রচারণা চালিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কেউ যদি নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার পূর্বে বলপ্রয়োগ বা হিংস্রতা ব্যতিরেকে যৌনকর্ম করে, তাহলে একে বলেসংবিধিবদ্ধ ধর্ষণ তবে অনেক রাষ্ট্র বয়সসীমা লংঘন করে যৌনকর্ম করার অনুমতি দেয় যদি উভয়ের মধ্যে বয়সের পার্থক্য কম হয়। এই বিষয়টিকে রোমিওজুলিয়েট অব্যাহতি বলে।

() কারাগারে ধর্ষণ : যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে ধর্ষণের পরিমাণ থেকে ১২ শতাংশ। এটা সমলিঙ্গে হয়। কিন্তু, তাদেরকে সমকামী বলা হয় না।

() ধারাবাহিক ধর্ষণ : বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরিচিত নারীকে শিকারের জালে ফেলে এই ধর্ষণ ঘটে।

() পরিশোধকৃত ধর্ষণঃ বিশেষ করে প্যাসিফিক দ্বীপে এটি দেখা যায়। কোনো পরিবারের পুরুষদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করা হলে তারা সাধারণত সংঘবদ্ধভাবে পরিশোধ নেওয়ার মানসে খারাপ ব্যবহারকারীর পরিবারের নারীদের ধর্ষণ করে সামাজিকভাবে তাকে হেয় করে থাকে।

(১০) যুদ্ধকালীন ধর্ষণ : এটা হলো যুদ্ধের সময়ে বিজয়ী সৈনিক বা সাধারণ নাগরিক দ্বারা পরাজিত শিবিরের মহিলাদের ধর্ষণ বা যৌন দাসী করা। মিলিটারী প্রধান নিজেও ধর্ষক হয় এবং সৈনিকদের সে কাজে উৎসাহ যোগায় শত্রুপক্ষকে হীনবল করার জন্য। ১৯৭১ বাংলাদেশের যুদ্ধে এমনটিই ঘটেছিল। যুদ্ধকালীন ধর্ষণ ১৯৪৯ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত। ৪র্থ জেনেভা কনভেনশনের ২৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যুদ্ধকালীন ধর্ষণ এবং বলপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ১৯৭৭ সালে জেনেভা কনভেনশনের ১৯৪৯ সালের এই নিষেধাজ্ঞা এডিশন্যাল প্রোটোকলস্ প্রবেশ করানো হয়। যুদ্ধের পরে নুরেমবাবার্স ট্রায়ালস টোকিও ট্রায়ালস্   গণধর্ষণকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়নি।

১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিন্যাল ট্রাইবুন্যাল  ফর রুয়াণ্ডা একটি কালজয়ী সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ধর্ষণ গণহত্যার ন্যায় একটি অপরাধ। নাভানেথেম পিলে তার বিচারে বলেন, “আবহমান কাল ধরে ধর্ষণ যেন যুদ্ধের একটি আনুষাঙ্গিক অংগে পরিণত হয়েছে। কিন্তু, এখন একে বিবেচনা করা হবে  যুদ্ধাপরাধ হিসেবে। আমরা কঠোরভাবে সবাইকে এই বার্তাই দিতে চাই, ধর্ষণ কোনোভাবেই যুদ্ধের পুরস্কার হতে পারে না।

১১. প্রতারণার দ্বারা ধর্ষণঃ

১২. সংশোধনী ধর্ষণঃ এটা লৈঙ্গিক ভূমিকাকে লঙ্ঘন করে  শাস্তিস্বরূপ সমকামীদের লক্ষ্য করে করা হয়। ধর্ষিতাকে জোর করে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, জন্মগতভাবে তার যৌন অভিমুখিতা কী। তাদের মনে যৌন অভিমুখিতা নিয়ে যে তথাকথিত বিভ্রান্তি আছে, তাকে সংশোধন করার জন্য ধর্ষণ করা বলে। একে সংশোধনী ধর্ষণ বলে।

১৩. হেফাজতগত ধর্ষণ : কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীর হেফাজতে থাকার সময়ে (যেমনঃ হাসপাতাল কর্মী, পুলিশ, বা সরকারি কর্মচারীর হেফাজতে থাকার সময়ে) এই ধর্ষণ ঘটে। এতিম খানাতে ধর্ষণও হেফাজতকালীন ধর্ষণ হিসাবে ধরা হয়। হেফাজতকালীন ধর্ষণের রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইরান, কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, জাম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্রে।

ভারতীয় আইন অনুসারে কোন ধর্ষণকে হেফাজতকালীন ধর্ষণ বলতে হলে ধর্ষককে সরকারি কর্মচারী হতে হবে। ধরণের ধর্ষণের শিকার হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, কর্মী হিসেবে নিচু শ্রেণির মানুষজন। আমেরিকান গবেষক প্যাটারবিয়া রোজে একটি উপশ্রেণিবিভাগ করেছেন :

#বিনিময় ধর্ষণ, দণ্ডমূলক ধর্ষণ, চৌর্যবৃত্তিমূলক ধর্ষণ। এটিতে নারী বা পুরুষকে অপহরণ করে তাকে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়   

আনুষ্ঠানিক ধর্ষণ : ধর্মীয় রীতিতে এই ধর্ষণ ঘটে।

মর্যাদা ধর্ষণ : সামাজিক পদমর্যাদা সামাজিক শ্রেণি পার্থক্যজনিত কারণে এই ধর্ষণ সংঘটিত হয়।

বাংলাদেশে প্রতি মাসে ধর্ষণের শিকার ৯৭৫ জন গণধর্ষণের শিকার ২০৮ নারী (আইন শালিশ কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুসারে)

নারীপুরুষ সমতার ক্ষেত্র : নারীপুরুষের সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আবার দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জানিয়েছে, রাজনৈতিক অংশগ্রহণে নারীদের অগ্রগতি হলেও মজুরিবৈষম্য যথাযথভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

আমাদের সমাজব্যবস্থা ভয়ঙ্করভাবে নারীবিদ্বেষী। এখানে প্রতিটা নিয়ম, সংস্কার, প্রথা সবই নারীর বিপক্ষে যায়, লিখেছেন, অনন্য আজাদ। সমাজের নারী অধিকার নিশ্চিত করতে যত আন্দোলন হয়, তার চেয়ে দ্বিগুণ বেগে ধর্ম আর সমাজ তেড়ে এসে নারীকে অবরুদ্ধ রাখতে চায়। সমাজের আলেমদাররা বলে বেড়ান, যেহেতু এখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেহেতু এখানে নারীদের চলতে হবে ইসলামের নিয়ম মেনে। কিন্তু, পুরুষদের বেলায় কোনো বাধা নেই। কোনো নিয়ম নেই। তারা বলেন, ইসলাম অনুযায়ী চললে নারী থাকবে সর্বোচ্চ মর্যাদা নিয়ে। অথচ সর্বোচ্চ মর্যাদা বলতে বোঝায়, নারী থাকবে পুরুষের নিচে (ধর্মগ্রন্থে অনেক উদাহরণ আছে) সম্পত্তিতে সমানাধিকার নাই। একা বাইরে যেতে পারবে না। অনুমতি নিতে হবে। পুরুষের চোখ থেকে নিজেকে পূর্ণ আবৃত করে রাখতে হবে। পুরুষ বিদেশে গিয়ে অস্থায়ী সংগিনীর সাথে সময় যাপন করতে পারবে। তাতে কোনো বাধা নেই। মুতা বিবাহ করার বিধান আছে। নারীর ক্ষেত্রে সেটা নাই।

নবী (সাঃ) বলেছেন, …… হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে কথা বলো না। তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে, (সূরাঃ আল আহযাব, আয়াত ৩২) “আর যখন নবী পত্নীদের কাছে তোমরা কোনো সামগ্রী চাইবে, এটি তোমাদের তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র।” (সূরাঃ আলআহযাব, আয়াত ৫৩)

বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থায় নারীর অবস্থানঃ পৃথিবীর ১৪৪টি দেশের উপর জরিপ করে তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে চলতি বছর বাংলাদেশে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। তবে শ্রম শক্তিতে অবদানের ক্ষেত্রে নারীপুরুষের মধ্যে এখনো বড় ব্যবধান রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স২০১৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ গত বছরে তালিকার ৬৪ তম অবস্থানে থাকলেও এবার পিছিয়ে ৭২ দাঁড়িয়েছে। তারপরও দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

নারীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে ২০ ধাপ এগিয়ে এখন ৯৩ তম অবস্থানে আছে। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়েছে। এক্ষেত্রে ২০০৬ সালে ১০৭ তম অবস্থান থাকলেও বর্তমানে ১৩৫ তম অবস্থানে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে সার্বিক সূচকে ভারত ৮৭, শ্রীলঙ্কা ১০০, নেপাল ১১০, মালদ্বীপ ১১৫, ভুটান ১২১ এবং পাকিস্তান ১৪০ তম অবস্থানে রয়েছে। পাকিস্তানের অবস্থান সর্বনিম্ন। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই এই ব্যবধান পুরোপুরি ঘোচাতে ব্যর্থ হলেও কেবল শ্রীলঙ্কা সফল হয়েছে।

নিয়ে মানবাধিকার কর্মী এবং হিউম্যান রাইটস্ ফাউণ্ডেশন এর প্রধান নির্বাহী এ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়েচে ভেলেকে বলেন, আমরা রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন দেখতে পাচ্ছি। কিছু উঁচু পদে তাঁদের অবস্থান আছে, ………… জেণ্ডার ইকোয়ালিটি বলতে নারী পুরুষের সব ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণ, সুবিধা আর অধিকারকে বুঝায়। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানত দরকার অর্থনৈতিক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা।  দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে আছে। ……. নারী এখনো ঘরে বন্দি, বিচার, সহিংসতা, নির্যাতন প্রশ্নে নারী এখনো অবহেলার শিকার। আইসল্যাণ্ডের নারীরা শীর্ষে ইয়েমেনের নারী সমাজ সূচকের সবশেষে।

উপসংহার: নারী নির্যাতন বৈষম্য সম্পর্কে বহু আলোচনা করা যায়। এদেশের নারীরা বিমান চালাচ্ছে, অন্য পরিবহন চালাচ্ছে। প্রতিরক্ষার কাজে নিযুক্ত হচ্ছে। কিন্তু, কোথাও তারা নিরাপদ নয়। এছাড়া, তারা বৈষম্যপূর্ণ অবস্থানে আছে। কর্মক্ষেত্রে তাদের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। বিদেশে ৭৬ লাখের মধ্যে মাত্র ৮৫ হাজার ৫৫৮ জন নারী। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ৬৯ জন নারী সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী। বিষয়টি সুখকর। কিন্তু, সমতা আনতে গেলে রবার্ট ফ্রস্টের কথা মনে রাখতেই হবে,

The woods are lovely dark and deep

But I have promises to keep

And miles to go before I sleep.. 

    #অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিউিট অব হেলথ অ্যাণ্ড ওয়েলফেয়ার এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে (১৯ ডিসেম্বর ২০১৯), অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ছয় জন নারীর একজন শারীরিক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এখানে পনেরো লাখেরও বেশি যৌন নিপীড়িত। চার জনের তিনজন পুরুষের হাতে নির্যাতিত। ১৬ জন পুরুষের একজন স্ত্রী বা যৌনসংগীর হাতে নির্যাতিত হয়। ৯৬% নারী পুরুষ সংগীর দ্বারা নির্যাতিত।

    #প্রাচীন ভারতে নারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে মনুর নিষেধাজ্ঞা ছিল। উনিশ শতকে ইংল্যাণ্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার সামাজিক আদর্শ নতুন ঢঙে নারীর সমান অধিকার নিরাপত্তা বাস্তবায়নে অন্তরায় হয়েছে। বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত নারীর সংখ্যা % এরও কম।

    #যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইডেন ইল্যাণ্ডের নারীরা সমান অধিকারের কথা বলে। কিন্তু, তাদের প্রতি নির্যাতন, ধর্ষণ শারীরিক লাঞ্চনার কোন ভালো বিচার হয় না। বিশ্বের ৩৬% নারী নানা নির্যাতনের শিকার হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সের ৮৩% নারী স্কুলে শারীরিক নির্যাতন ধর্ষণের শিকার হয়।

    #ইংল্যাণ্ডের প্রতি ডজনে জন নারী (১৬৫৯ বছর) যৌন হয়রানির শিকার হয়।

    #দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ৪০৪১% ১১ বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয় এবং ৪০% নারী ধর্ষিতা হয় প্রতি বছর।

    #সুইডেনে প্রতি জনে ১জন ধর্ষিতা হয়।

    #নিউজিল্যাণ্ডের মোট নারীর ১৬.৪০% ধর্ষিতা হয়। কানাডায় প্রতি জনে জন নারী ধর্ষিতা হয়। কানাডায় প্রতি জনে জন নারী জীবনে অন্তত একবার কোনো না কোনোভাবে পুরুষ দ্বারা নির্যাতিত হয়। সারা বিশ্বে আজও নারীর অবস্থা প্রায় এমনই।

তথ্যসূত্রঃ() সংবাদ প্রতিদিন, ৩০ সেপ্টেম্বর আপডেট, ২০০০

      () হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট, ১৯৯৯

      () এডওয়ার্ড লুইস (২০০০) উইমেন ইন এশিয়াঃ ট্রেডিশান, মডার্নিটি এ্যাণ্ড গ্লোবালাইজেশান (ইউনিভার্সিটি অভ মিচিগান প্রেস, পেজ৯৭)

      () নারডোস, রাহেল (২০০৩), ওভারকামিং ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন অ্যাণ্ড গার্লসঃ দ্য ইনটারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু ইরেডিকেইট অ্য ওয়াল্ডওয়াইড প্রবলেম; লোম্যান অ্যাণ্ড লিটিল ফিল্ড পাবলিসার্স, পৃ. ৫৪৫৫

    () উইকিপিডিয়া

  • লেখক,অজিত কুমার রায়, সরকারি কলেজের ইংরেজির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক

গ্রাম-উত্তর শৈলমারী, পো:কৈয়া বাজার, জেলা: খুলনা, বাংলা

 






Related News

Comments are Closed